শিং মাছ পরিষ্কার করার সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতি

শিং মাছ পরিষ্কার করা অনেকের কাছেই ঝামেলার মনে হয়, কিন্তু কিছু সহজ কৌশল জানলে কাজটা একদম সহজ হয়ে যায়! মজাদার শিং মাছের curry, ভাজা বা ঝোল বানানোর আগে জেনে নিন কিভাবে চটজলদি এবং ভালোভাবে মাছ পরিষ্কার করবেন।

লবণ ও লেবুর জাদু (The Magic of Salt & Lemon): মাছগুলোকে একটি বড় পাত্রে নিন। এবার এর মধ্যে পর্যাপ্ত লবণ (২-৩ চামচ) আর লেবুর রস (১-২টা লেবুর) দিয়ে ভালো করে মেখে ৫-১০ মিনিট রেখে দিন। লেবু আর লবণ মাছের আঁশটে গন্ধ দূর করতে এবং পিচ্ছিল ভাব কমাতে দারুণ কাজ করে।


ছাই অথবা আটা/ময়দা ব্যবহার: যারা গ্রামে থাকেন, তারা শিং মাছ পরিষ্কার করার জন্য ছাই ব্যবহার করতে পারেন। ছাই দিয়ে ঘষলে মাছের পিচ্ছিল ভাব দ্রুত চলে যায়। শহরে যারা আছেন, তারা ছাইয়ের বদলে আটা বা ময়দা ব্যবহার করতে পারেন। মাছের সাথে আটা/ময়দা মিশিয়ে শিলপাটাতে কিছুক্ষণ ঘষুন, দেখবেন পিচ্ছিল ভাব কমে গেছে।


ধারালো বঁটি বা ছুরি ব্যবহার: লবণ, লেবু বা আটা/ময়দা দিয়ে মাখার পর মাছগুলোকে ভালো করে ঘষে নিন। এবার একটি ধারালো বঁটি বা ছুরি দিয়ে মাছের আঁশগুলো (যদি থাকে) চেঁছে ফেলুন এবং পাখনা ও লেজ কেটে নিন। শিং মাছের মাথা ও আশেপাশে কিছু শক্ত অংশ থাকে, সেগুলোও পরিষ্কার করে নিন।


তারের জালি ব্যবহার: হাঁড়ি-পাতিল মাজার জন্য যে তারের জালি ব্যবহার করা হয় সেরকম একটি পরিষ্কার জালি নেবেন। এরপর পরিষ্কার সিঙ্কে নাড়িভুড়ি পরিষ্কার করে নেওয়া মাছগুলো রেখে তারের জালি দিয়ে হালকা হাতে ঘসে নিন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই মাছ পরিষ্কার হয়ে যাবে। মাছের গায়ে লেগে থাকা ছাই ও তারের জালির ব্যবহারে দ্রুত মাছ পরিষ্কার করা সম্ভব।


পেঁপের খোসা ব্যবহার: পরিস্কার পানি দিয়ে মাছের গায়ে লেগে থাকা ছাই পরিষ্কার করে নিন। কয়েক টুকরা কাঁচা পেঁপের খোসা নিন। এবার সেই টুকরাগুলোকে ব্লেন্ড করে নিন। এবার শিং মাছের সঙ্গে সেই পেঁপের খোসার পেস্ট ভালো করে মাখিয়ে নিন। এভাবে রেখে দিন ১৫ মিনিট। এরপর হালকা হাতে ঘসে নিলেই মাছগুলো ধবধবে পরিষ্কার হয়ে যাবে। (এই পদ্ধতিতে শিং মাছ পরিষ্কার করলে খুব দ্রুত চকচকে পরিষ্কার হয় ঠিকই কিন্তু মাছের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এইভাবে পরিষ্কার না করাটাই উত্তম)


পেঁপে পাতা ব্যবহার: শিং মাছ পরিষ্কার করার জন্য কষ্ট করে ঘষাঘষি করার দরকার হবে না। প্রথমে কয়েকটি পেঁপে পাতা নিন। এরপর সেগুলো ভালো করে পরিষ্কার করে কুচি কুচি করে কেটে নিন। এবার পাতাগুলো বেটে বা ব্লেন্ড করে নিন।পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে কেটে রাখা মাছের গায়ে মাখিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। এরপর পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। শিং মাছ একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে।  (এই পদ্ধতিতে শিং মাছ পরিষ্কার করলে খুব দ্রুত চকচকে পরিষ্কার হয় ঠিকই কিন্তু মাছের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এইভাবে পরিষ্কার না করাটাই উত্তম)


গামছা বা মোটা কাপড় দিয়ে ঘষা: একটি পুরোনো মোটা গামছা বা শক্ত কাপড় দিয়ে মাছগুলো ধরে জোরে জোরে ঘষে পরিষ্কার করতে পারেন। এতে শিং মাছের গায়ের কালো আস্তরণ ও পিচ্ছিল ভাব দূর হবে।


ব্রাশের ব্যবহার: সবজি পরিষ্কার করার নরম ব্রাশ থাকলে সেটিও ব্যবহার করতে পারেন। মাছের গায়ে ঘষলে কালো দাগগুলো উঠে আসবে।


বালি বা মোটা সুজি: কিছুটা বালি বা মোটা সুজি দিয়ে মাছগুলো ভালো করে ঘষে নিতে পারেন। এতে মাছের গায়ের পিচ্ছিল ভাব ও কালো দাগ সহজে উঠে আসবে। এরপর পর্যাপ্ত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


লবণ-হলুদ মিশ্রণ:

• কীভাবে করবেন: মাছগুলোর উপর ভালো করে মোটা দানার লবণ (sea salt) এবং অল্প হলুদ গুঁড়ো ছিটিয়ে দিন। প্রায় ৫-১০ মিনিট রেখে দিন।তারপর ভালোভাবে ঘষে নিন। এই পদ্ধতিতে খুব দ্রুতই মাছের কালো দাগ এবং পিচ্ছিল ভাব দূর হয়ে যায়


কিছু জরুরি টিপস:

• তাজা মাছ বেছে নিন: পরিষ্কার করার ঝামেলা কমানোর জন্য সবসময় তাজা শিং মাছ কিনুন। তাজা মাছের গায়ে পিচ্ছিল ভাব কম থাকে এবং গন্ধও তেমন হয় না।

• তাৎক্ষণিক পরিষ্কার: মাছ কেনার পর যত দ্রুত সম্ভব পরিষ্কার করে ফেলুন। এতে মাছের সতেজতা বজায় থাকবে এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সুযোগ পাবে না।

• হাতে গ্লাভস: মাছ পরিষ্কার করার সময় হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। এতে হাত পিচ্ছিল হবে না এবং মাছের কাঁটা থেকে রক্ষা পাবেন।

• ফ্রিজে সংরক্ষণ: পরিষ্কার করার পর যদি মাছ রান্না না করেন, তবে ভালো করে জল ঝরিয়ে এয়ারটাইট কন্টেইনারে ফ্রিজে রাখুন।


এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে দেখুন, শিং মাছ পরিষ্কার করা আপনার কাছে আর কঠিন মনে হবে না! শিং মাছের মজাদার ঝোল, ভুনা বা অন্য কোনো পদ এবার খুব সহজেই তৈরি করতে পারবেন।

শিং মাছ শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন A, D, E, এবং ক্যালসিয়াম, যা আমাদের হাড় ও দাঁতের জন্য খুব উপকারী। এছাড়াও এটি রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form